কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে ভ্রমণ:

সারি সারি পাহাড়ের ঢালে এ উদ্যানের প্রাকুতিক সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। নানা রকম গাছপালা সমৃদ্ধ এ উদ্যানের উল্লেখ্যযোগ্য গাছপালা হলো সেগুন, চাপালিশ, জারুল, চম্পা, সোনালু, চালতা, চিকরাশি, মাল, শিলকড়ই, ধারমারা, গামারি, অর্জুন, আমলকি, আমড়া, বহেরা, বাজনা, বড়ই, পিটরাজ, পিটালী, বাশপাতা, বৈলাম, নাগেশ্বর, চিকরাশী, হিজল, উদল, উরিয়া, লোহাকাঠ ইত্যাদি। এসব গাছপালার ছায়ার নিচ দিয়ে বিস্তৃত পায়ে হাটাপথগুলো দিয়ে চললে হারিয়ে যেতে মন চাইবে অজানায়। নানা জীববৈচিত্র্যেও সমৃদ্ধ এ বনাঞ্চল। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের বাসিন্দা বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো বন্যহাতি, হরিণ, হনুমান, উল্লুক, শুকর, বনবিড়াল, গুইসাপ, অজগর ইত্যাদি। বর্তমানে প্রায়ই এ বনে দেখা মিলছে বন্যহাতির। দলবেধে হাতিরা এ বনের ভিতরে ঘুরে বেড়ায় অবাধে। বিভিন্ন প্রজাতির পাখ-পাখালির অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র এই জঙ্গল। ধনেশ,

ময়ুর, ফিঙে, বুলবুলি, বনমোরগ, ময়না, ঘুঘু, টিয়া, মাছরাঙা প্রতৃতি পাখির আবাসস্থল বন। নীরবতা অবলম্বন করে চললে এসব পাখির সহজেই দেখা মেলে এ বনে। নিসর্গ (বর্তমান আইপ্যাক) বন এলাকা ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির আওতায় বেশ কয়েকটি পর্যক্ষেন স্থান আর পায়ে হাটা পথ তৈরি করা হয়েছে এ বনে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উল্লেখ্যযোগ্য পথটি হলো ব্যাঙছড়ি মাঝারি বনপথ। চট্টগ্রাম-কাপ্তাই মহাসড়কের ব্যাঙছড়ি মারমা পাড়া থেকে শুরু হওয়া বনের ভেতর এ পথটির দৈর্ঘ্য প্রায় আড়াই কিলোমিটারের একটু কম। এ পথটিতেই জীব বৈচিত্র্য সবচেয়ে বেশি। এ পথে বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষন স্থান আছে। উচু-নিচু পাহাড়ি এ পথে আরও আছে ছোট-বড় ছড়া। কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান এলাকায় আছে মারমা আদিবাসী সম্প্রদায়ের দুটি গ্রাম। একটি ব্যাঙছড়ি মারমাপাড়া আর চৎমুরং বড়পাড়া। এসব গ্রামে দেখতে পারেন আদিবাসীদের বৈচিত্র্যময় জীবনধারা। গ্রামে প্রবেশের আগে অবশ্যই কারবারি বা হেডম্যানের অনুমতি নিয়ে নেবেন।

যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে বাস, রেল কিংবা আকাশপথে চট্টগ্রাম আসতে হবে। চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট বাস ষ্টেশন থেকে সকাল-সন্ধ্যা পনেরো মিনিট পরপর বাস ছেড়ে যায় কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে। পৌছুতে সময় লাগে দেড় দুই ঘন্টা। ভাড়া ৮০-১০০ টাকা। এ ছাড়া ঢাকা থেকে সরাসরি কাপ্তাই যায় ডলফিন, সৌদিয়া, এস আলম, শ্যামলী পরিবহনের নন-এসি বাস। ঢাকার কলাবাগান, ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে এসব বাস ছেড়ে যায়। ভাড়া ৪৫০-৫৫০ টাকা। কোথায় থাকবেন: কাপ্তাই থাকার জন্য সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। কাপ্তাই শহরের এসব হোটেল হলো-হোটেল থ্রি ষ্টার,হোটেল নিরাপদ, বোয়ালখালি বোর্ডিং, কামাল বোর্ডিং ইত্যাদি। এসব হোটেলে ২০০-৬০০ টাকায় দু জন থাকার কক্ষ আছে।

এ ছাড়া বন বিভাগের রেষ্ট হাউসে থাকতে হলে পূর্বানুমতির প্রয়োজন হবে, কাপ্তাই এলাকায় খাবার জন্য সাধারণ মানের বেশ কিছু রেস্তোরা আছে। সবচেয়ে ভালো খাবারের জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ঝুম রেস্তোরা উৎকৃষ্ট। কী করবেন: জঙ্গলে ভ্রমণে সবসময় হালকা কাপড় ও জুতা এবং কেমোফ্লেজ রঙের কাপড় পরিধান করবেন। রোদ চশমা, রোদ টুপি, ছাতা, পানির বোতল, সঙ্গে নেবেন। বর্ষায় ভ্রমণে গেলে অবশ্যই রেইনকোট কিংবা পনচ সঙ্গে নিন। পোকামাকড়ের ও মশার হাত থেকে বাচতে পতঙ্গনাশক ক্রিম সঙ্গে নিন। দূরের বন্যপ্রাণী ও পাখি দেখতে দূরবীন নিতে পারেন। জঙ্গলে ভ্রমনকালীন সর্বোচ্চ নীরবতা অবলম্বন করুন। প্লাষ্টিক জাতীয় প্যাকেট, বোতল, ক্যান সঙ্গে এনে বাইরে কোথাও ফেলুন। কী করবেন না: পিকনিক করতে জঙ্গলে যাবেন না। ভ্রমণে উচ্চ শব্দে মাইকে গান কিংবা কোনো কিছু বাজাবেন না। বন্যপ্রাণীরা বিরক্ত হয় এমন কোনো শব্দ কিংবা আওয়াজ করবেন না। ময়লা, প্লাষ্টিক জাতীয় কোনো কিছু জঙ্গলে ফেলবেন না। বনে ধুমপান করবেন না। প্রয়োজনীয় তথ্য: কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানে একাকী ভ্রমন না করাই ভালো। দলবদ্ধভাবে ভ্রমণে গেলে অবশ্যই অভিজ্ঞ গাইড সঙ্গে নেওয়া ভালো। তাতে জঙ্গলে ভ্রমণ এবং বন্যপ্রাণী দর্শন সহজ হবে কাপ্তাই উদ্যানে আইপ্যাক প্রশিক্ষিত কয়েকজন গাইড আছেন। নির্ধারিত সম্মানির বিনিময়ে এসব গাইডের সেবা নেওয়া যাবে। কয়েকজন গাইডের মোবাইল নং: করিমউদ্দিন; ০১৮২২২৭৩১৮০, নান্টু চাকমা: ০১৮৩১৫৪৬০৪২,মং চিং ই মারমা: ০১৮২২১৫৩৫৩৭, বিপ্লব বড়–য়া: ০১৮১২০৭৫৪৪৫ এছাড়া যে কোন প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যানের কার্যালয়ে: ০৩৫২৯-৫৬৩৫৭।

            

PAGE 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25